বৈশ্বিক অস্থিরতা এখনও কাটেনি। এ জন্য চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে যেখানে পোশাক রফতানি কমছে, সেখানে বাড়ছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম মূল্যের পোশাক তৈরি করায় বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ছে পোশাকের। এ কারণে রফতানিও বাড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর প্রথম মাস জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রথম মাসে নীট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২.২৪ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি ১১.৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া এই মাসে পোশাক রফতানিতে মোট প্রবৃদ্ধি ১৭.৪৩ শতাংশ। এ মাসে পোশাক রফতানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের।
এ ছাড়া প্রথম মাসে নীট পোশাক রফতানি হয়েছে ২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। এ ছাড়া ওভেন পোশাক থেকে রফতানি আয় হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের। এদিকে শুধু জুলাই মাসে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। অর্জন হয়েছে ৩ বিলিয়ন ৯৫ বিলিয়ন ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেশি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের মাসে জুনের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার কম পোশাক রফতানি হয়েছে। নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ২৭ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘যদিও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি চিত্রিত করছে। আমাদের প্রধান রফতানি বাজারগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি কমতে শুরু করেছে এবং অর্থনৈতিক সূচকগুলো স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ বাজারে পোশাক আমদানি কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে আমাদের ২০২৩ সালের বাকি সময়ের জন্য একটি সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, কারণ পোশাক এবং সামগ্রিক বৈশ্বিক বাণিজ্য গত বছরের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
দেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মোট রফতানির ৮৮ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো আমেরিকার বাজারে মোট রফতানি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে গত অর্থবছরে রফতানি কমে ৯৭০ কোটি ডলারে নেমেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশের মতো কম।
ইউরোপের দেশ জার্মানিকে বলা হয় বাংলাদেশি পণ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় বাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে মোট ৭০৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বাজারে রফতানি হয় ৭৫৯ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৩ অর্থবছরে জার্মানিতে মোট রফতানির ৯৪ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক। যার মূল্যমান প্রায় ৬৬৮ কোটি ডলার। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হয় হোম টেক্সটাইল পণ্য।
২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনে ৬৭৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলায় শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটিতে ৬৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে দেশটিতে ২৮৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল ও ১১ কোটি ডলারের প্লাস্টিক রফতানি হয়।
ইউরোপ যুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়া ও পোল্যান্ডেও রফতানি কমেছে। পোল্যান্ডে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়ায় ৪৬০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। দেশটিতে রফতানি করা প্রধান পণ্য নিটওয়্যার। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে ৪২৫ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রফতানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট রফতানি আয় ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের বাজারে ৫৩১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনে ৩৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। দেশটিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে গেলেও দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি কমেনি। গত অর্থবছর দেশটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৩১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে রফতানি হয় ৪৮২ কোটি ডলারের পণ্য। বাজারটিতে শীর্ষ তিন রফতানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক ৫০৩ কোটি ডলার, হোম টেক্সটাইল ৮ কোটি ডলার এবং হিমায়িত চিংড়ি ৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। স্পেনে মোট রফতানির ৯৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।